আর্জেন্টিনার প্রথম শিরোপা জয়ের গল্প
আটাত্তরের বিশ্বকাপে ফেভারিট ছিল আর্জেন্টাইনরাই। কেননা বেকেনবাওয়ারকে ছাড়া জার্মানরা ছিলো বিশ্বকাপ জয়ী দলের ছায়া। তাছাড় আর্জেন্টিনার মারিও কেম্প সে বছর পুরো দস্তুর স্ট্রাইকার হয়ে উঠেছেন। ছিলেন ডেনিয়েল প্যাসারেলা, প্লেমেকার আরডিল্স আর গোলকিপার ফিল্লোলরা। স্বাগতিক কোচ লুইস মেনোত্তি তার ২২ জনের দলে রেখেছিলেন আরেকজনকে; নাম দিয়াগো আরমান্দো মারাডোনা!
এই জীবন্ত কিংবদন্তি তখন ১৭ বছরের টগবগে কিশোর! কিন্তু এতো কিছুর পরও প্রথম পর্বটা পার করতে বেশ কষ্টই হয় স্বাগতিকদের। কেননা সেবার আর্জেন্টাইনদের পার করতে হয়েছিল তরুণ মিশেল প্লাতিনির ফরাসিদের! সে যাত্রায় ২-১ পার পেয়ে গেলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারা। একই ব্যবধানে হাঙ্গেরীকে হারালেও ইতালির কাছে হেরে রানার-আপ হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ইতালি।
দুই নম্বর গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় পর্বে ওঠে পোল্যান্ড আর পশ্চিম জার্মানি। পশ্চিম জার্মানি পোলিশ আর তিউনিশিয়ানদের সঙ্গে ড্র এবং মেক্সিকো ৬ গোলে বিধ্বস্ত করে দ্বিতীয় পর্বে উঠে যায়। দুই জয় আর পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে ভাগাভাগির পয়েন্ট নিয়ে পোল্যান্ড হয় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।
কিন্তু আসল লড়াইটা যেন জমলো, তিন নম্বর গ্রুপে। এখানে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রিয়া। তবে একই পয়েন্ট নিয়ে শুধুমাত্র টাকার কাছে হার মেনে, রানার্সআপ ব্রাজিল। এ যাত্রায়ও হতাশ হতে হয় স্পেনকে।
গ্রুপ ফোর! দারুণ জমিয়েছিলো পেরু। নেদারল্যান্ডের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করলেও স্কটল্যান্ড আর ইরানকে হারিয়ে শীর্ষস্থান পায় পেরু। তবে সমান পয়েন্ট পেয়েও গোল গড়ে নেদারল্যন্ডসের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে বাদ পড়ে স্কটল্যান্ড।
শেষ আটের খেলাও ছিলো জম্পেশ। গ্রুপ এ’তে রানার-আপ নেদারল্যান্ড, ইতালি, পশ্চিম জার্মানি আর অস্ট্রেয়িা। তবে জার্মান আর অস্ট্রিয়ানদের কোন পেছনে ফেলে সেমিতে পৌঁছে যায় নেদারল্যান্ডস ও ইতালি। জার্মানির সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করলেও অস্ট্রিয়া ও ইতালিকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয় নেদারল্যান্ডস। ইতালি হয় রানার্সআপ।
গ্রুপ বি’তে লড়াই জমে স্বাগতিক আর্জেন্টিনা আর চীর প্রতিদ্বন্দ্বি ব্রাজিলের মধ্যে। দুই দলেরই জয়ের পাল্লা সমান। পেরুকে ৩-০, আর পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারায় ব্রাজিল। আর আর্জেন্টিনার সঙ্গে করে গোলশূন্য ড্র। তাতেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া হয়নি ব্রাজিলের। বরং পোল্যান্ডকে ২ গোলে হারালেও পেরুকে ৬ গোলে বিধ্বস্ত করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিকরা।
এখানেই প্রশ্নটা বেশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
যদি বলেন ফাইনালের গল্প শুনবেন, সেখানেও সমালোচনা হয়েছে। বলা হয়, ইচ্ছে করেই ম্যাচকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে আর্জেন্টিনা। অথচ শুরুটা কিনা অসাধারণ করেছিলো ডাচরা। তাদের সামনে প্রায় পাত্তাই পাচ্ছিলো না স্বাগতিকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন খেলা ঘুরে যায়। নিয়ন্ত্রণ চলে যায়, আর্জেন্টিনার কাছে। হিরো বনে যান, ক্যাম্পেস।
প্রথমার্ধে তার গোলই এগিয়ে থাকে স্বাগতিকরা। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার মিনিট আটেক আগে ডাচদের সমতায় ফেরায় নান্নিংগা। পরে অতিরিক্ত সময়ে আবারো ক্যাম্পেসের ভেল্কি। তার দ্বিতীয় গোলের পর জয়ের মার্জিন শক্ত করেছে, বার্তোনি। শেষ পর্যন্ত স্কোর লাইন ৩-১। আর্জেন্টাইনদের হাতে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম শিরোপা।
0 Comments
Thank you